বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ন
করোনা প্রাদুর্ভাব রুখতে গত ১৭ই মার্চ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি)। দীর্ঘদিনের এই বন্ধে শিক্ষার্থীদের সেশনজন হবার আশংকা দেখা দেয়।যা বিবেচনা করে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরীক্ষামূলক অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। অনানুষ্ঠানিক এ কার্যক্রমে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই নিজেদের সমস্যার কারণে যুক্ত হতে পারে নি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (১৪মে) উপাচার্যের সঙ্গে বিভাগীয় প্রধানদের বৈঠক শেষে ঘোষণা আসে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে।উপাচার্য ড.মোঃ ছাদেকুল আরেফিনের পক্ষ থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে এ কার্যক্রম চালু রাখার নির্দেশনা আসার পর থেকেই প্রতিবাদে ফুঁসছেন সেখানকার শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানা গেছে, বেশকটি বিভাগ গত কদিনে অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম চালিয়ে শিক্ষার্থীদের আশানুরূপ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারে নি। সবার ধারণা ছিল উপস্থিতির করুণ দশার যৌক্তিক কারণগুলো বিবেচনা করে বৃহস্পতিবারের বৈঠক শেষে এ কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা আসবে। কিন্তু সেদিন তেমন কোন ঘোষণা না আসার পর থেকে সবকটি বিভাগ অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের ওপরে চাপিয়ে দেয়।যে কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব মেনে অনলাইনেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান সমৃদ্ধ প্লাকার্ড নিয়ে হাজির হওয়া শুরু করে শিক্ষার্থীরা।
অনলাইনে প্রতিবাদের উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের আলিসা মুনতাজ। তিনি জানান, শহরের বাইরের এলাকাগুলোতে শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যে বসবাস করে। যেখানে পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত সুবিধা পাচ্ছেন না অধিকাংশ মানুষ সেখানে অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা-কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের ওপর একরকম জোরজুলুম করে চাপিয়ে দেয়ার সামিল। প্রচন্ড অমানবিকতার পরিচয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ এমন অবস্থায় আরো বেশি মানবিক হয়ে,একজন সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীকে আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিলো বলে মনে করি।
তিনি আরো জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের এসব দুর্দশার কথা চিন্তা করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আমরা প্রতিবাদের ঘোষণা দিচ্ছি। আগামী ১৮মে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ২ঘন্টা একযোগে লিখিতভাবে নিজেদের দাবিসংবলিত ছবি নিজ নিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের বিপক্ষে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া অতিদ্রুত আমরা সাংবাদিকদের সাথে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নানা অমানবিকতার চিত্র তুলে ধরে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরিকল্পনা করছি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল ইসলাম জানান, একটি এক ঘন্টার অনলাইন ক্লাস করতে একজন শিক্ষার্থীর যে টাকা খরচ হচ্ছে সেটা দিয়ে নিম্নবিত্ত একটি পরিবারের একদিনের বাজার হয়।করোনাকালীন সময়ে কাজকর্ম না করতে পারায় দেশের সকল মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এমন সময়ে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত জোরালোভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো। সেখানে বারবার শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিপরীত মত এলেও অনলাইনে ক্লাস নেওয়া চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত দুঃখজনক ও অমানবিক।
তিনি আরো জানান, অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম চলমান রাখার পিছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বারবার তুলে ধরা হচ্ছে সেশনজট কমানোর যুক্তি। যেটা আসলে গ্রহণযোগ্য কোনো বক্তব্য নয়।সেশনজট কমানো শুধুমাত্র শিক্ষকের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে দ্রুতই সেশনজন কমানো যাবে বলে এই শিক্ষার্থী মনে করছেন।